মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন

নোটিশঃ
দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সাংবাদিক  নিয়োগসহ পরিচয় পত্র নবায়ণ চলছে।

শাহরাস্তিতে স্ত্রীকে শাসন করায় ,স্বামীর পরিবারের উপর শ্বশুর বাড়ি কতৃক হামলা. স্বামীর বাড়িঘর ভাঙ্গচুর ,থানায় অভিযোগ..

মোঃ হাসানুজ্জামানঃ

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্বশুর পরিবারের লোকজন রাতের অন্ধকারে জামাতার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এবিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জামাতা ৫ জনকে বিবাদী করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

ঘটনাটি ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় উপজেলার সূচীপাড়া দক্ষিন ইউনিয়নের রাগৈ গ্রামের পাঁচৈর বাড়িতে ঘটে।

জানা যায়, ওই বাড়ির মৃত আবু তাহেরের পুত্র ইয়াছিন ওরফে রাশেদ প্রায় ৮ বছর আগে একই উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের পাথৈর গ্রামের বিলকিছ আক্তারকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তারা ৩ সন্তানের জনক জননী।

ঘটনার দিন দুপুরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সামান্য কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ইযাছিন ওরফে রাশেদ তার স্ত্রী বিলকিছকে একটি থাপ্পর মারে। বিষয়টি বিকেলে বিলকিছ মুঠোফোনে রাগৈ উত্তর পাড়া পাটোয়ারী বাড়ির আনোয়ার হোসেনের স্ত্রীকে জানায়।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পরের ঘটনাটি ঘটে।

থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঘটনাকারীরা ওইদিন ইয়াছিন, তার মা মাছুমা বেগম, ছোট ভাই রিপন ও তার স্ত্রী সুমা বেগমকে বেদম প্রহার করে ইয়াছিনের লকার ভেঙ্গে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, তার মা মাছুমা বেগমের গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ও রিপনের স্ত্রী সুমা বেগমের গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, কানে দুল নিয়ে যায় বিবাদীরা।

এবিষয়ে ইয়াছিন বলেন, ঈদের দিন সকাল থেকে আমার স্ত্রী বিলকিছ নানান বিষয় নিয়ে আমার সাথে রাগারাগি ও বাক যুদ্ধ শুরু করে। এক পর্যায়ে আমি নিজ ঘর থেকে বের হয়ে যাই। দুপুরে খেতে আসলে একই ব্যবহার শুরু করে সে।

তখন আমি রাগান্বতি হয়ে তার গালে একটি চড় বসিয়ে দেই। এরপর আমি আবারও বাসা থেকে বেরিয়ে যাই। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলে দেখি বিলকিছের বড় বোন ও তার স্বামী আনোয়ার হোসেনসহ ৭/৮ জন লোক আমার বাসায়।

আমি ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর আমার স্ত্রীকে তাদের জন্য রাতের খাবার প্রস্তুত করতে বলি। এসময় আগত মেহমাগন আমার উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। আমি তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করি। তারা আমার কোন কথাই শুনতে রাজি হননি।

তারা আমার উপরে হামলা চালায়। এতে আমি আমি আহত হই। আমার ডাক চিৎকার বাড়ির লোকজন ছুটে এসে আমাকে তাদের কবল থেকে উদ্ধার করে। পরে তারা আমার মাকে খুঁজতে বের হয়। আমার মা তখন ছোট ভাই রিপনের ঘরে ছিলো।

তারা সেখানে গিয়ে আমার মাকে বেদম প্রহার করে। এতে আমার মাও গুরুতর আহত হন। এসময় তারা আমার ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর, আলমিরা ভেঙ্গে ঘরে থাকা জায়গা বিক্রি করা ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লুট করে।

আমার পুরো ঘর তারা তছনছ করে বেরিয়ে যায়। এসময় বাড়ির লোকজন আমাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। আমি নিরুপায় সঠিক বিচারের প্রত্যাশায় ৫ জনকে বিবাদী করে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।

এবিষয়ে রিপনের স্ত্রী সুমা বেগম বলেন, আমার স্বামী আমাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। ঈদ উপলক্ষে শ্বাশুড়ির সাথে ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। ঘটনার সময় আমার বসত ঘরের দরজা বন্ধ ছিলো।

হঠাৎ একদল লোক এসে আমার শ্বাশুড়িকে উচ্চস্বরে ডাকতে শুরু করে। দরজা খেলার আগেই তারা দরগা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে এবং আমার শ্বাশুড়িকে মারধর করতে শুরু করে। আমার ভাসুরের ভায়রা ভাই আনোয়ার হোসেন ও তার ছেলে আমার শ্বাশুড়ির গলা টিপে ধরে। এক পর্যায়ে আমার শ্বাশুড়ি জ্ঞান হারিয়ে হয়ে মাটিতে লুটে পড়ে।

শ্বাশুড়িকে বাঁচাতে গেলে তারা আমার উপরে হামলা করে। আমাকে মারধর ও টানা হেঁচড়া করে আমার শালিনতা নষ্ট করে এবং আমার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, কানের দুল লুট করে নিয়ে যায়।

ইয়াছিনের মা মাছুমা বেগমকে এবিষয়ে জিজ্ঞাস করলে তিনি গলা ব্যথায় কথা বলতে পারেননি।

ঘটনায় অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের দিন বিকেলে আমার শালিকা বিলকিছ মুঠোফোনে জানায়, তার স্বামী ইয়াছিন তাকে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে। এমব সংবাদ পেয়ে আমরা সন্ধ্যায় তাদের বাড়ি যাই এবং এবিষয়ে জানার চেষ্টা করি।

এসময় বিলকিছের স্বামী ইয়াছিন আমাদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে। এক সময় হাতাহাতির মত ঘটনা ঘটে। বিয়ের পর থেকে আমার শালিকা তার ঘরে শান্তিতে নেই। তার স্বামী ও শ্বাশুড়ির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েও স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করেনি।

ইয়াছিনের স্ত্রী বিলকিছ বলেন, ঘটনার দিন আমার স্বামী আমাকে একটি চড় মেরেছেন। এছাড়া আর কিছু হয়নি। আমি আমার বড় বোনকে বিষয়টি ফোনে জানিয়েছি। রাতে তারা এসে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

All rights reserved © meghnapost.com